শিরোনামঃ
কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমান সামগ্রী ব্যবহার, সরকারী অর্থ নয়ছয়! সিএনজি চালক থেকে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক মাসুম, সমালোচনার ঝড় পঙ্গু হাসপাতালে যেনো পুকুর চুরির মতো ঘটনা" ১১ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড : ঐক্য পরিষদ এর সভাপতিসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা! এনবিআরের গেট বন্ধ, ঢুকতে পারছেন না ঐক্য পরিষদের নেতারা মব জাস্টিস প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, পুলিশের গাফিলতি থাকলেও ব্যবস্থা ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা

‘আমি এখনো প্রেমে পড়ি, বেশ করি’

#
news image

হেমন্তের বিকেল। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। রাজধানীর সমস্ত সড়ক ফাঁকা প্রায়। রমনার গাছে গাছে কাকেরা এসে ঠাঁই নিচ্ছে। আর অপর প্রান্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষ প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অনেকে ক্রিকেটও খেলছে। শরৎ-হেমন্তের এমন মধুলগ্নে প্রাণ খোলা সুরের পসরা বসিয়েছেন কবীর সুমন। রাজধানীর সড়কগুলো তখন মিলে গেছে রমনা পার্ক সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। আর সমস্ত সময় যেন আটকে গেলো কবীর সুমনের সুরে সুরে।

সুরে এত প্রাণ, কে আর মেলে ধরতে পারে! গান আর জীবনকথা যেন মিলেমিশে একাকার করে ফেললেন। সফেদ ধূতি আর খয়েরি পাঞ্জাবিতে সুমন বসেছিলেন এদিন অন্যরকম মুডে। যেন তারই গাওয়া গান ‘দিনটা আজ অন্যরকম ছিল।’ ৭৩ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ শিল্পী এখনও যে প্রেমের কাঙাল, এখনও যে প্রেম বিলাতে পারেন, তা সুর আর কথার বাণে মেলে ধরলেন। বললেন, ‘আমি এখনো প্রেমে পড়ি, বেশ করি’। কবীরের এমন সরল স্বীকারোক্তি অনেকটা সমালোচকদের জন্য জবাবও বটে। তার ধর্ম, সংসার বদল নিয়ে ওপারে বেশ (ভারত) সমালোচনা আছে। বলছিলেন, ‘আমি নকশাল করি, আমি তৃণমূল করি, আমি ধর্মচ্যুত হই, তাই নিয়ে আলোচনা হয় ওপারে। কিন্তু আমি গান করি, তা নিয়ে আলোচনা হয় না।

‘আমি চাই’ গানটি পরিবেশন করে বলেন, ‘এই গানটি যখন রেকর্ড করি, তখন আমার নাম সুমন চট্টপাধ্যায়। এরপর কবীর সুমন হই আদালতে এফিডেভিট করে। সুমন আমার বাবা-মায়ের দেওয়া নাম। কবীর সুমন নামের কারণে ভারতের অনেকেই আমাকে ঘৃণা করে। চট্টপাধ্যায় নাম থাকা অবস্থায় এই গান করা নিয়ে কেউ আমাকে ঘৃণা করেনি। কেউ প্রশ্ন তোলেনি। বলেনি, নামটা পাল্টাও। কবীর সুমন করার পর ঘৃণা করছে। অথচ, কবীর সুমন নামটার মধ্যে ধর্ম নাই। এটি তারা বুঝলো না।’

এর আগে কবীর সুমন ঢাকায় এসেছিলেন এক যুগ পার হয়েছে। সেবার তাকে গান করতে দেওয়া হয়নি। ফিরে গিয়েছিলেন অভিমান নিয়ে। ঢাকায় আর আসবেন না বলে তখন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এত প্রেম যেখানে, এত ভালোবাসার মানুষ যেখানে, সেখানে না এসে কেউ পারে! ক্ষোভ-অভিমান ভুলে গানের ঢালা নিয়ে এসেছিলেন এই গানওয়ালা।

যদিও এবারও তাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ তাতে অনুমতি দেয়নি। মাত্র একদিন আগে জায়গা পরিবর্তন করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। ‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর উদযাপন শীর্ষক আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ছিল কবীর সুমন ভক্তদের ঠাসা। প্রথম আর শেষ দিন ছিল আধুনিক। দ্বিতীয় দিন ছিল বাংলা খেয়াল। আজ শেষ দিনে তিল ধরার ঠাঁই ছিল না।

সুমন যখন গান করছিলেন, তখন চেনা সুরে সবাই যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন। আবেগে আপ্লুতও অনেকে। মাঝে মাছে পিন পতন শব্দও মেলেনি দর্শক সারিতে। আবার কখনও কখনও সুমনের সুরে কণ্ঠ মেলালেন। ‘বাশুরিয়া বাজায় বাশিঁ’ গানটি তো সবাই মিলেই গাইলো। কবীর সুমন ভক্ত প্রিয়সী। ধানমন্ডি থেকে এসেছেন। সঙ্গে আরও দু’জন। বলেন, ‘কৈশোরেই সুমনের প্রেমে পড়েছি। বয়স এখন চল্লিশের কোটায়। এতদিনে প্রেম আরও বেড়েছে। এমনভাবে কোনো শিল্পী আমাকে পাগল করতে পারেনি। প্রেম, বিদ্রোহ আর জীবনমুখী এমন আধুনিক গান আর কে গাইতে পারে! তার খেয়ালে আরও মত্ত হয়েছি। সরাসরি তার কনসার্টে আসতে পারা ছিল আমার জন্য চরম পাওয়া।’

বিকেল থেকে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতও হলো। মধ্যবেলায় খানিক বিরতি নিয়ে টানা চার ঘণ্টা জমিয়ে রাখলেন। বৃদ্ধ হাতে কিবোর্ড বাজিয়ে সাধন-ভজনও প্রকাশ করলেন। অনুষ্ঠানের প্রায় গোটা সময়ই এককভাবে বাজালেন। যেটুকু সময় তবলা, বেসগিটার আর প্যাড সঙ্গত করলো, তাও সুমনের অনবদ্য নির্দেশনায়। নিজের লেখা আর সুরে অধিকাংশ গান করলেও শহীদ কাদরি এবং এনামুল কবীর সুজনের লেখা দুটি গান করেও দর্শক মন কাড়েন। ‘তোমাকে চাই’ গানটি পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে আয়োজনের পর্দা নামলো আর চিরযৌবনা এই শিল্পী প্রেমের আবেদনটিই রেখে গেলেন।

প্রভাতী খবর ডেস্ক

২৩ অক্টোবর, ২০২২,  12:04 AM

news image

হেমন্তের বিকেল। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। রাজধানীর সমস্ত সড়ক ফাঁকা প্রায়। রমনার গাছে গাছে কাকেরা এসে ঠাঁই নিচ্ছে। আর অপর প্রান্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষ প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অনেকে ক্রিকেটও খেলছে। শরৎ-হেমন্তের এমন মধুলগ্নে প্রাণ খোলা সুরের পসরা বসিয়েছেন কবীর সুমন। রাজধানীর সড়কগুলো তখন মিলে গেছে রমনা পার্ক সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। আর সমস্ত সময় যেন আটকে গেলো কবীর সুমনের সুরে সুরে।

সুরে এত প্রাণ, কে আর মেলে ধরতে পারে! গান আর জীবনকথা যেন মিলেমিশে একাকার করে ফেললেন। সফেদ ধূতি আর খয়েরি পাঞ্জাবিতে সুমন বসেছিলেন এদিন অন্যরকম মুডে। যেন তারই গাওয়া গান ‘দিনটা আজ অন্যরকম ছিল।’ ৭৩ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ শিল্পী এখনও যে প্রেমের কাঙাল, এখনও যে প্রেম বিলাতে পারেন, তা সুর আর কথার বাণে মেলে ধরলেন। বললেন, ‘আমি এখনো প্রেমে পড়ি, বেশ করি’। কবীরের এমন সরল স্বীকারোক্তি অনেকটা সমালোচকদের জন্য জবাবও বটে। তার ধর্ম, সংসার বদল নিয়ে ওপারে বেশ (ভারত) সমালোচনা আছে। বলছিলেন, ‘আমি নকশাল করি, আমি তৃণমূল করি, আমি ধর্মচ্যুত হই, তাই নিয়ে আলোচনা হয় ওপারে। কিন্তু আমি গান করি, তা নিয়ে আলোচনা হয় না।

‘আমি চাই’ গানটি পরিবেশন করে বলেন, ‘এই গানটি যখন রেকর্ড করি, তখন আমার নাম সুমন চট্টপাধ্যায়। এরপর কবীর সুমন হই আদালতে এফিডেভিট করে। সুমন আমার বাবা-মায়ের দেওয়া নাম। কবীর সুমন নামের কারণে ভারতের অনেকেই আমাকে ঘৃণা করে। চট্টপাধ্যায় নাম থাকা অবস্থায় এই গান করা নিয়ে কেউ আমাকে ঘৃণা করেনি। কেউ প্রশ্ন তোলেনি। বলেনি, নামটা পাল্টাও। কবীর সুমন করার পর ঘৃণা করছে। অথচ, কবীর সুমন নামটার মধ্যে ধর্ম নাই। এটি তারা বুঝলো না।’

এর আগে কবীর সুমন ঢাকায় এসেছিলেন এক যুগ পার হয়েছে। সেবার তাকে গান করতে দেওয়া হয়নি। ফিরে গিয়েছিলেন অভিমান নিয়ে। ঢাকায় আর আসবেন না বলে তখন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এত প্রেম যেখানে, এত ভালোবাসার মানুষ যেখানে, সেখানে না এসে কেউ পারে! ক্ষোভ-অভিমান ভুলে গানের ঢালা নিয়ে এসেছিলেন এই গানওয়ালা।

যদিও এবারও তাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ তাতে অনুমতি দেয়নি। মাত্র একদিন আগে জায়গা পরিবর্তন করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। ‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর উদযাপন শীর্ষক আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ছিল কবীর সুমন ভক্তদের ঠাসা। প্রথম আর শেষ দিন ছিল আধুনিক। দ্বিতীয় দিন ছিল বাংলা খেয়াল। আজ শেষ দিনে তিল ধরার ঠাঁই ছিল না।

সুমন যখন গান করছিলেন, তখন চেনা সুরে সবাই যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন। আবেগে আপ্লুতও অনেকে। মাঝে মাছে পিন পতন শব্দও মেলেনি দর্শক সারিতে। আবার কখনও কখনও সুমনের সুরে কণ্ঠ মেলালেন। ‘বাশুরিয়া বাজায় বাশিঁ’ গানটি তো সবাই মিলেই গাইলো। কবীর সুমন ভক্ত প্রিয়সী। ধানমন্ডি থেকে এসেছেন। সঙ্গে আরও দু’জন। বলেন, ‘কৈশোরেই সুমনের প্রেমে পড়েছি। বয়স এখন চল্লিশের কোটায়। এতদিনে প্রেম আরও বেড়েছে। এমনভাবে কোনো শিল্পী আমাকে পাগল করতে পারেনি। প্রেম, বিদ্রোহ আর জীবনমুখী এমন আধুনিক গান আর কে গাইতে পারে! তার খেয়ালে আরও মত্ত হয়েছি। সরাসরি তার কনসার্টে আসতে পারা ছিল আমার জন্য চরম পাওয়া।’

বিকেল থেকে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতও হলো। মধ্যবেলায় খানিক বিরতি নিয়ে টানা চার ঘণ্টা জমিয়ে রাখলেন। বৃদ্ধ হাতে কিবোর্ড বাজিয়ে সাধন-ভজনও প্রকাশ করলেন। অনুষ্ঠানের প্রায় গোটা সময়ই এককভাবে বাজালেন। যেটুকু সময় তবলা, বেসগিটার আর প্যাড সঙ্গত করলো, তাও সুমনের অনবদ্য নির্দেশনায়। নিজের লেখা আর সুরে অধিকাংশ গান করলেও শহীদ কাদরি এবং এনামুল কবীর সুজনের লেখা দুটি গান করেও দর্শক মন কাড়েন। ‘তোমাকে চাই’ গানটি পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে আয়োজনের পর্দা নামলো আর চিরযৌবনা এই শিল্পী প্রেমের আবেদনটিই রেখে গেলেন।