যুদ্ধে বিপর্যস্থ পৃথিবী
 
                                        অলোক আচার্য
০৫ নভেম্বর, ২০২২, 11:44 PM
 
                                        যুদ্ধে বিপর্যস্থ পৃথিবী
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়েছে। দিন যতই গড়াচ্ছে উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যা, অবকাঠামোগত ক্ষতি,শরণার্থী সমস্যা এবং বৈশি^ক খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সহায়তায় ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধে প্রথম থেকেই উঠে আসছে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহারের কথা। নিজের অস্তিত্ত্ব হুমকিতে পরলে যে রাশিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবে না সে কথাও আলোচনায় এসেেছ। এখন সেই পারমাণকি অস্ত্রের ব্যবহারের সম্ভাবনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যুদ্ধ কেন বন্ধ হচ্ছে না? এখানেও কি কোনো সুহ্ম বৈশি^ক রাজনীতির খেলা! ইচ্ছে করলেই কি যুদ্ধ যুদ্ধ এই খেলা বন্ধ করা সম্ভব যেখানে পৃথিবী অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এখানে শুধুই লোকসান। জীবন,সম্পদ সহ সারা পৃথিবীর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তৈরি হয়েছে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ হলেও এই যুদ্ধ পশ্চিমাদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধেও পরিণত হয়েছে। যেখানে একদিকে রাশিয়া-চীন এবং অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব। আধিপত্য বিস্তারের এই প্রতিযোগীতার সময়ে এই বিভক্ত বিশ্বের দিকেই ইঙ্গিত করছে। লাভ যে একেবারেই কারো হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। এই যুদ্ধকালীন সময়েও দেশে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবী ভরে যাচ্ছে মিলিয়নারে। আমরা দেখছি দরিদ্রদের চিত্র। বিপরীত চিত্রও কিন্তু আছে। অস্ত্র ব্যবসায় লাভবান হচ্ছে কিছু দেশ। যুদ্ধ মানেই অস্ত্র। আর বিশ্বের গুটিকতক দেশ অস্ত্র তৈরি এবং বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি। নিজেকে সুরক্ষিত করার প্রশ্নটি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকে আরও বেশি সামনে এসেছে। তাছাড়া অস্ত্র মানেই মোড়লীপনা। বিশ্বজুড়েই অস্ত্র ব্যবসা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে অস্ত্রের বাণিজ্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ইউরোপে। সুইডেনভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি) গত পাঁচ বছরের অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে বিশে^ অস্ত্র ব্যবসা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও ইউরোপে ব্যবসা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এই রিপোর্টে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। আর যুদ্ধ শুরুর পর তো অস্ত্রই মূল শক্তি হয়ে উঠেছে। নিজের নিরাপত্তাই যেখানে মূখ্য সেখানে অস্ত্রই প্রধান। রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে, ইউরোপে অস্ত্র ব্যবসা বাড়তে শুরু করে ২০১৪ সাল থেকে। ওই বছর ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। মূলত এ ঘটনাই বাড়িয়ে তোলে ইউরোপের নিরাপত্তা উদ্বেগ। এর পরপরই ইউরোপের একাধিক দেশ সামরিক খাতের বাজেট বাড়িয়ে দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই গুরুত্ব আরো বেশি বোঝা যায়। ইউক্রেনের এখন দরকার শুধু অস্ত্র। ঐ পাঁচ বছরে বিশ্বের অস্ত্র বাণিজ্যের ৭৮ শতাংশ ছিল মাত্র পাঁচটি দেশের দখলে। যুক্তরাষ্ট্র,রাশিয়া,ফ্রান্স,জার্মানি ও চীন। আর যুক্তারাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। আর শীর্ষ দশ অস্ত্র আমদানিকারক হলো ভারত,সৌদি আরব,মিশর,অস্ট্রেলিয়া,চীন,কাতার,দক্ষিণ কোরিয়া,পাকিস্তান,জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দেশগুলো বিশ্বের ৫৫ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করে।আবার জ্বালানি সংকট তীব্র হওয়ায় তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনীতি ফুলে ফেঁপে উঠছে। তবে ভুক্তভোগী দেশের সংখ্যাই বেশি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে তীব্র হয়েছে জ্বালানি সংকট। ইউরোপ এই সংকট মেটাতে রাশিয়াও ওপর নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছে। এর বিপরীতে তারা নির্ভর করছে উপসাগরীয় দেশগুলোর তেলের ওপর। এতে তাদের অর্থনীতি ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলগুলো এমন একটি অঞ্চলের অন্তর্গত যেখানে দুই দশক ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। আন্দোলন ও যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত ১০ লাখ মানুষ মারা গেছেন। জানা যায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানির বর্তমান মূল্যের ফলে উপসাগরীয় ছয়টি দেশ আগামী পাঁচ বছরে তিন দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাজারে এেেসছে ব্যাপক পরিবর্তন। পশ্চিমাদের জন্য জ্বালানি তেলের বড় সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় অঞ্চল। এই কারণে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চিত্রও পরিবর্তন হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ হয়েছে। আঞ্চলিক জিডিপির ৬০ শতাংশ অবদান রাখছে এটি, যা আরও বাড়বে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এই যুদ্ধ পৃথিবীকে একটি নতুন ব্যবস্থায় দাঁড় করাচ্ছে। অথচ বিশ্বজুড়েই মন্দাবস্থা ঘনিভূত হচ্ছে। এর মধ্যেও ব্যক্তিগতভাবেও মিলিয়নারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশগুলো ক্রমাগত একে অন্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও চলছে আবার এই লড়াইও চলছে। কিন্তু সমাধানের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভালো কোনো আশা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। ঠিক কবে এই যুদ্ধ বন্ধ হবে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ পরাশক্তিগুলো আদৌ যুদ্ধের মধ্যেমে কি চায় সেটাই স্পষ্ট নয়। রাশিয়া বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল নিজেদের মধ্যে নিয়েছে। যদিও ইউক্রেন তা উদ্ধারের চেষ্টা করছে। যদি যুদ্ধ দিয়েই একসময় যুদ্ধ শেষ হয় তাহলে সেই ক্ষয়ক্ষতি হবে ভয়ংকর। কারণ পারমানবিক অস্ত্রের প্রয়োগের ব্যাপারটি বারবার উঠে আসছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা আসছে। প্রাসঙ্গিক কারণেই এসব বিষয় উঠে আসছে। যুদ্ধ কোনোদিনও ভালো কিছু দিতে পারে না। এতে একপক্ষ বিজয়ী হবে নিশ্চয় কিন্তু ততদিনে বহু প্রাণ এবং অবকাঠামো ধ্বংস হবে যে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ইউক্রেনের বহু সময় লাগবে। আবার অবকাঠামোতে একসময় ঘুরে দাঁড়ালেও মানুষ তো আর ফিরে আসবে না। তাছাড়া যুদ্ধ যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে পৃথিবী জুড়েই সংকট ঘনীভূত হবে। খাদ্য সংকট হবে সবচেয়ে তীব্র।
যুদ্ধের কয়েক মাসের মাথায় পৃথিবী যে সংকটের টের পাঁচ্ছে যদি আরও দীর্ঘায়িত হয় তাহলে এই সংকট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বা খাদ্য সংকট কি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা পৃথিবীবাসী কিছুটা অনুমান করতে পারছে। সুতরাং যুদ্ধ বন্ধ হতে হবে। মানুষ মরছে বোমার আঘাতে, শহর ধ্বংস হচ্ছে। তবে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এক বিভক্ত বিশ্ব নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে স্পষ্ট হবে শক্তির বিভক্তি বলয়। যেখানে বলয়ের একদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রশক্তি এবং অন্যদিকে রয়েছে রাশিয়া-চীন। রাশিয়া আক্রমণের মাত্রা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ইউক্রেনকে সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। ফলে ধরা যায়, এই যুদ্ধ সহসাই বন্ধ হচ্ছে না। আবার এই যুদ্ধে বিশে^ নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের বিষয়টি প্রবলভাবে ধাক্কা খাচ্ছে। যুদ্ধ কতদিন চলতে পারে এর উত্তর এ কারণে দেওয়া যায় না কারণ যে কারণগুলো দেখিয়ে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে তার মেটার আশ্বাস না পেলে রাশিয়া পিছু হটবে বলে মনে হয় না। যুদ্ধ থামার কোনা আশা দেখছে না বিশ্ব। যত দীর্ঘ সময় নিয়ে যুদ্ধ হবে ততই ক্ষতি বাড়বে। হয়তো একপক্ষ বিজয়ী হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে মানবতা অর্থাৎ মানুষ। লাভ-ক্ষতির হিসেবের পাল্লায় ক্ষতির হিসাবটাই অনেক বড়। একটি টেকসই পৃথিবী গঠনে অস্ত্র নয় প্রয়োজন সবার জন্য খাদ্য,শিক্ষা,চিকিৎসা,বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা। সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হতে প্রথমেই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আর তা না হলে নিজেদের হাতে তৈরি সভ্যতায় নিজেরাই বিলুপ্ত হবে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট
অলোক আচার্য
০৫ নভেম্বর, ২০২২, 11:44 PM
 
                            
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়েছে। দিন যতই গড়াচ্ছে উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যা, অবকাঠামোগত ক্ষতি,শরণার্থী সমস্যা এবং বৈশি^ক খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সহায়তায় ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধে প্রথম থেকেই উঠে আসছে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহারের কথা। নিজের অস্তিত্ত্ব হুমকিতে পরলে যে রাশিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবে না সে কথাও আলোচনায় এসেেছ। এখন সেই পারমাণকি অস্ত্রের ব্যবহারের সম্ভাবনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যুদ্ধ কেন বন্ধ হচ্ছে না? এখানেও কি কোনো সুহ্ম বৈশি^ক রাজনীতির খেলা! ইচ্ছে করলেই কি যুদ্ধ যুদ্ধ এই খেলা বন্ধ করা সম্ভব যেখানে পৃথিবী অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এখানে শুধুই লোকসান। জীবন,সম্পদ সহ সারা পৃথিবীর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তৈরি হয়েছে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ হলেও এই যুদ্ধ পশ্চিমাদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধেও পরিণত হয়েছে। যেখানে একদিকে রাশিয়া-চীন এবং অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব। আধিপত্য বিস্তারের এই প্রতিযোগীতার সময়ে এই বিভক্ত বিশ্বের দিকেই ইঙ্গিত করছে। লাভ যে একেবারেই কারো হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। এই যুদ্ধকালীন সময়েও দেশে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবী ভরে যাচ্ছে মিলিয়নারে। আমরা দেখছি দরিদ্রদের চিত্র। বিপরীত চিত্রও কিন্তু আছে। অস্ত্র ব্যবসায় লাভবান হচ্ছে কিছু দেশ। যুদ্ধ মানেই অস্ত্র। আর বিশ্বের গুটিকতক দেশ অস্ত্র তৈরি এবং বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি। নিজেকে সুরক্ষিত করার প্রশ্নটি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকে আরও বেশি সামনে এসেছে। তাছাড়া অস্ত্র মানেই মোড়লীপনা। বিশ্বজুড়েই অস্ত্র ব্যবসা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে অস্ত্রের বাণিজ্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ইউরোপে। সুইডেনভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি) গত পাঁচ বছরের অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে বিশে^ অস্ত্র ব্যবসা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও ইউরোপে ব্যবসা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এই রিপোর্টে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। আর যুদ্ধ শুরুর পর তো অস্ত্রই মূল শক্তি হয়ে উঠেছে। নিজের নিরাপত্তাই যেখানে মূখ্য সেখানে অস্ত্রই প্রধান। রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে, ইউরোপে অস্ত্র ব্যবসা বাড়তে শুরু করে ২০১৪ সাল থেকে। ওই বছর ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। মূলত এ ঘটনাই বাড়িয়ে তোলে ইউরোপের নিরাপত্তা উদ্বেগ। এর পরপরই ইউরোপের একাধিক দেশ সামরিক খাতের বাজেট বাড়িয়ে দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই গুরুত্ব আরো বেশি বোঝা যায়। ইউক্রেনের এখন দরকার শুধু অস্ত্র। ঐ পাঁচ বছরে বিশ্বের অস্ত্র বাণিজ্যের ৭৮ শতাংশ ছিল মাত্র পাঁচটি দেশের দখলে। যুক্তরাষ্ট্র,রাশিয়া,ফ্রান্স,জার্মানি ও চীন। আর যুক্তারাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। আর শীর্ষ দশ অস্ত্র আমদানিকারক হলো ভারত,সৌদি আরব,মিশর,অস্ট্রেলিয়া,চীন,কাতার,দক্ষিণ কোরিয়া,পাকিস্তান,জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দেশগুলো বিশ্বের ৫৫ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করে।আবার জ্বালানি সংকট তীব্র হওয়ায় তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনীতি ফুলে ফেঁপে উঠছে। তবে ভুক্তভোগী দেশের সংখ্যাই বেশি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে তীব্র হয়েছে জ্বালানি সংকট। ইউরোপ এই সংকট মেটাতে রাশিয়াও ওপর নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছে। এর বিপরীতে তারা নির্ভর করছে উপসাগরীয় দেশগুলোর তেলের ওপর। এতে তাদের অর্থনীতি ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলগুলো এমন একটি অঞ্চলের অন্তর্গত যেখানে দুই দশক ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। আন্দোলন ও যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত ১০ লাখ মানুষ মারা গেছেন। জানা যায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানির বর্তমান মূল্যের ফলে উপসাগরীয় ছয়টি দেশ আগামী পাঁচ বছরে তিন দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাজারে এেেসছে ব্যাপক পরিবর্তন। পশ্চিমাদের জন্য জ্বালানি তেলের বড় সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় অঞ্চল। এই কারণে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক চিত্রও পরিবর্তন হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ হয়েছে। আঞ্চলিক জিডিপির ৬০ শতাংশ অবদান রাখছে এটি, যা আরও বাড়বে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এই যুদ্ধ পৃথিবীকে একটি নতুন ব্যবস্থায় দাঁড় করাচ্ছে। অথচ বিশ্বজুড়েই মন্দাবস্থা ঘনিভূত হচ্ছে। এর মধ্যেও ব্যক্তিগতভাবেও মিলিয়নারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশগুলো ক্রমাগত একে অন্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও চলছে আবার এই লড়াইও চলছে। কিন্তু সমাধানের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভালো কোনো আশা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। ঠিক কবে এই যুদ্ধ বন্ধ হবে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ পরাশক্তিগুলো আদৌ যুদ্ধের মধ্যেমে কি চায় সেটাই স্পষ্ট নয়। রাশিয়া বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল নিজেদের মধ্যে নিয়েছে। যদিও ইউক্রেন তা উদ্ধারের চেষ্টা করছে। যদি যুদ্ধ দিয়েই একসময় যুদ্ধ শেষ হয় তাহলে সেই ক্ষয়ক্ষতি হবে ভয়ংকর। কারণ পারমানবিক অস্ত্রের প্রয়োগের ব্যাপারটি বারবার উঠে আসছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা আসছে। প্রাসঙ্গিক কারণেই এসব বিষয় উঠে আসছে। যুদ্ধ কোনোদিনও ভালো কিছু দিতে পারে না। এতে একপক্ষ বিজয়ী হবে নিশ্চয় কিন্তু ততদিনে বহু প্রাণ এবং অবকাঠামো ধ্বংস হবে যে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ইউক্রেনের বহু সময় লাগবে। আবার অবকাঠামোতে একসময় ঘুরে দাঁড়ালেও মানুষ তো আর ফিরে আসবে না। তাছাড়া যুদ্ধ যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে পৃথিবী জুড়েই সংকট ঘনীভূত হবে। খাদ্য সংকট হবে সবচেয়ে তীব্র।
যুদ্ধের কয়েক মাসের মাথায় পৃথিবী যে সংকটের টের পাঁচ্ছে যদি আরও দীর্ঘায়িত হয় তাহলে এই সংকট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বা খাদ্য সংকট কি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তা পৃথিবীবাসী কিছুটা অনুমান করতে পারছে। সুতরাং যুদ্ধ বন্ধ হতে হবে। মানুষ মরছে বোমার আঘাতে, শহর ধ্বংস হচ্ছে। তবে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এক বিভক্ত বিশ্ব নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে স্পষ্ট হবে শক্তির বিভক্তি বলয়। যেখানে বলয়ের একদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রশক্তি এবং অন্যদিকে রয়েছে রাশিয়া-চীন। রাশিয়া আক্রমণের মাত্রা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ইউক্রেনকে সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। ফলে ধরা যায়, এই যুদ্ধ সহসাই বন্ধ হচ্ছে না। আবার এই যুদ্ধে বিশে^ নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের বিষয়টি প্রবলভাবে ধাক্কা খাচ্ছে। যুদ্ধ কতদিন চলতে পারে এর উত্তর এ কারণে দেওয়া যায় না কারণ যে কারণগুলো দেখিয়ে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে তার মেটার আশ্বাস না পেলে রাশিয়া পিছু হটবে বলে মনে হয় না। যুদ্ধ থামার কোনা আশা দেখছে না বিশ্ব। যত দীর্ঘ সময় নিয়ে যুদ্ধ হবে ততই ক্ষতি বাড়বে। হয়তো একপক্ষ বিজয়ী হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে মানবতা অর্থাৎ মানুষ। লাভ-ক্ষতির হিসেবের পাল্লায় ক্ষতির হিসাবটাই অনেক বড়। একটি টেকসই পৃথিবী গঠনে অস্ত্র নয় প্রয়োজন সবার জন্য খাদ্য,শিক্ষা,চিকিৎসা,বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা। সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হতে প্রথমেই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আর তা না হলে নিজেদের হাতে তৈরি সভ্যতায় নিজেরাই বিলুপ্ত হবে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট
 
                                             
                                             
                                             
                                             
                                            