হামলার শঙ্কায় সতর্ক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

এসএম শামসুজ্জোহা
০৮ নভেম্বর, ২০২২, 1:42 AM

হামলার শঙ্কায় সতর্ক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী
দেশের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ অর্ধশতাধিক কিশোর ও তরুণের কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হওয়াদের একাংশের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারাটা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। সেই সাথে এখনও শনাক্ত হয়নি এমন কিশোর ও তরুণের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারনা তাদের। আর তাই পুরনোদের নেতৃত্বে উঠতি বয়সের এসব জঙ্গিদের দ্বারা হামলার সম্ভাবনাকে মাথা রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা দৈনিক প্রভাতী খবরের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ১৯ জেলার ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সেই তালিকায় থাকা কিশোর ও তরুণদের অনেককেই এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি সংস্থাটি। এদের মধ্যে অনেকে বিদেশে রয়েছেন বলে জানেন পরিবার-স্বজনরা। তারা মাঝে-মধ্যে বাড়িতে টাকাও পাঠান। তাই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে ঘরছাড়া তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র মতে, সারা দেশে সশস্ত্র জঙ্গিরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাই যেকোনো স্থানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তিনটি জঙ্গি সংগঠনের প্রায় শতাধিক সদস্য দেশে বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যক্তির ওপর জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে। পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে এ রকম উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে।
পুরাতন ও নবীনদের সংগঠিত করে এই তৎপরতা চালানো হতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে ঘাঁটি গেড়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের ইউনিট। বিমানবন্দর, পুলিশের স্থাপনা, দূতাবাস এবং সব উপাসনালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে সারা দেশের পুলিশের ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
র্যাব বলছে, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে এবং গ্রেফতারের বিষয়ে পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থান তাদের হামলার টার্গেট হতে পারে এমন আশঙ্কায় অভিযান পরিচালনা করছে র্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী।
অন্যদিকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী জঙ্গিদের এ সংগঠনের ৭০ জন সদস্য এখনও দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। তবে পাহাড়ি যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্যাম্প বা আস্তানায় জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, সেখানে অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মিজোরাম সীমান্তের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে তাই ওই সীমান্তবর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর মতাদর্শের দুই দফায় নিরুদ্দেশ হওয়া কুমিল্লার ৬ তরুণসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করার পর র্যাব জানিয়েছে, নিষিদ্ধ তিন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত নতুন জঙ্গী সংগঠনের নাম জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। বেশ কিছু সদস্য নিয়ে ২০১৭ সালে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তবে ২০১৯ সাল থেকে পুরোদমে কর্মকাণ্ড শুরু করে সংগঠনটি। যদিও কার্যক্রম পরিচালনার তিন বছর পর এই সংগঠনটির বিষয়ে জানতে পারে পুলিশের এই এলিট বাহিনী।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নতুন এই সংগঠনের জঙ্গীরা। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জঙ্গীরা। আত্মগোপনে যাওয়া তরুণ ও কিশোররা অনেকেই সামরিক কলাকৌশল ও অস্ত্রসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে বলে র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা কোনো ডিভাইস বা মোবাইল ব্যবহার না করায় তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পাহাড়ে নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কয়েকটি দুর্গম এলাকা র্যাব সদস্যদের নজরদারিতে রয়েছে। বান্দরবানের রুমা, বিলাইছড়ি, বোয়াংছড়ি, রোনিপাড়া এবং সীমান্তবর্তী বলিপাড়া ও থানচি-আলীকদমের কিছু এলাকা দুর্গম। আর রাঙামাটির হরিণা, বালুছড়ি, তুইব্যাংদাম গ্রামগুলোও সীমান্তবর্তী এবং দুর্গম থাকায় পলাতক থাকা জঙ্গিরা আগ্মগোপনে রয়েছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি তরুণের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি, যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তারা গত দুই বছরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। সর্বশেষ দেড় মাস আগে কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিরুদ্দেশ হন।’ তবে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের জেলাভিত্তিক যে হিসাব দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ১৯ জেলা থেকে ৫৫ জন ঘর ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেছে র্যাব। এর মধ্যে দুই দফায় গ্রেফতারর ১২ জন এই তালিকার বাইরে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘কোন জেলা থেকে কতজন নিরুদ্দেশ হয়েছেন, সেই তালিকা আমাদের কাছে আছে। তাদের কারও কারও পরিবার জানে, সন্তান বিদেশে গেছেন, তারা মাঝেমধ্যে অর্থ পাঠান। কিন্তু আসলে তারা জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছেন।’ নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কমান্ডার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘সেখানে তাদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের নাশকতার কী পরিকল্পনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত অভিযান চলছে। আরও গ্রেপ্তার হলে তারপর তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে বলা যাবে।’
র্যাবের তালিকায় থাকা ৩৮ জন হলো- মো. দিদার, তাহিয়াত চৌধুরী, আহাদ, মশিউর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, আরিফুর রহমান, মো. নঈম হোসেন, শামীম মিয়া, আল আমিন ফকির, আমিনুল ইসলাম, মো. নাজমুল আলম নাহিদ, আল আমিন, শেখ আহমদ মামুন, মো. আস সামি রহমান, সাদিক, হাসান সাঈদ, বায়েজিদ, জুয়েল মুসল্লী, ইমরান রহমান শিথিল, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আল আমিন, ইমরান, শিব্বির আহমদ, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ আবু জাফর, যুবায়ের, নিহাদ আব্দুল্লাহ, মাহমুদ ডাকুয়া, আমির হোসেন, নাহিদ, সালেহ আহমাদ, রাব্বী আবদুস সালাম, ইয়াছিন ব্যাপারী, মো. মিরাজ সিকদার, ওবায়দুল্লাহ সাকিব, জহিরুল ইসলাম, আবু হুরায়রা ও আবুল বাশার মৃধা।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিদের অর্থের যোগান দিচ্ছে এমন বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। সেসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এগুলো কী ধরনের অর্থায়ন, অর্থের যোগানদাতা বা ডোনারদের নিজস্ব অর্থ না কিনা, তারা অন্য কোনও জায়গা থেকে বা যারা সহানুভূতিশীল তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে কিনা, সেটি কি দেশে না বিদেশ থেকে এসেছে, এসব বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি, যাচাই-বাছাই করছি।
এসএম শামসুজ্জোহা
০৮ নভেম্বর, ২০২২, 1:42 AM

দেশের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ অর্ধশতাধিক কিশোর ও তরুণের কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হওয়াদের একাংশের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারাটা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। সেই সাথে এখনও শনাক্ত হয়নি এমন কিশোর ও তরুণের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারনা তাদের। আর তাই পুরনোদের নেতৃত্বে উঠতি বয়সের এসব জঙ্গিদের দ্বারা হামলার সম্ভাবনাকে মাথা রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা দৈনিক প্রভাতী খবরের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ১৯ জেলার ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সেই তালিকায় থাকা কিশোর ও তরুণদের অনেককেই এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি সংস্থাটি। এদের মধ্যে অনেকে বিদেশে রয়েছেন বলে জানেন পরিবার-স্বজনরা। তারা মাঝে-মধ্যে বাড়িতে টাকাও পাঠান। তাই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে ঘরছাড়া তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র মতে, সারা দেশে সশস্ত্র জঙ্গিরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাই যেকোনো স্থানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তিনটি জঙ্গি সংগঠনের প্রায় শতাধিক সদস্য দেশে বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যক্তির ওপর জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে। পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে এ রকম উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে।
পুরাতন ও নবীনদের সংগঠিত করে এই তৎপরতা চালানো হতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে ঘাঁটি গেড়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের ইউনিট। বিমানবন্দর, পুলিশের স্থাপনা, দূতাবাস এবং সব উপাসনালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে সারা দেশের পুলিশের ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
র্যাব বলছে, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে এবং গ্রেফতারের বিষয়ে পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থান তাদের হামলার টার্গেট হতে পারে এমন আশঙ্কায় অভিযান পরিচালনা করছে র্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী।
অন্যদিকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী জঙ্গিদের এ সংগঠনের ৭০ জন সদস্য এখনও দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। তবে পাহাড়ি যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্যাম্প বা আস্তানায় জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, সেখানে অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মিজোরাম সীমান্তের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে তাই ওই সীমান্তবর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর মতাদর্শের দুই দফায় নিরুদ্দেশ হওয়া কুমিল্লার ৬ তরুণসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করার পর র্যাব জানিয়েছে, নিষিদ্ধ তিন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত নতুন জঙ্গী সংগঠনের নাম জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। বেশ কিছু সদস্য নিয়ে ২০১৭ সালে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তবে ২০১৯ সাল থেকে পুরোদমে কর্মকাণ্ড শুরু করে সংগঠনটি। যদিও কার্যক্রম পরিচালনার তিন বছর পর এই সংগঠনটির বিষয়ে জানতে পারে পুলিশের এই এলিট বাহিনী।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নতুন এই সংগঠনের জঙ্গীরা। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জঙ্গীরা। আত্মগোপনে যাওয়া তরুণ ও কিশোররা অনেকেই সামরিক কলাকৌশল ও অস্ত্রসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে বলে র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা কোনো ডিভাইস বা মোবাইল ব্যবহার না করায় তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পাহাড়ে নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কয়েকটি দুর্গম এলাকা র্যাব সদস্যদের নজরদারিতে রয়েছে। বান্দরবানের রুমা, বিলাইছড়ি, বোয়াংছড়ি, রোনিপাড়া এবং সীমান্তবর্তী বলিপাড়া ও থানচি-আলীকদমের কিছু এলাকা দুর্গম। আর রাঙামাটির হরিণা, বালুছড়ি, তুইব্যাংদাম গ্রামগুলোও সীমান্তবর্তী এবং দুর্গম থাকায় পলাতক থাকা জঙ্গিরা আগ্মগোপনে রয়েছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি তরুণের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি, যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তারা গত দুই বছরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। সর্বশেষ দেড় মাস আগে কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিরুদ্দেশ হন।’ তবে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের জেলাভিত্তিক যে হিসাব দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ১৯ জেলা থেকে ৫৫ জন ঘর ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেছে র্যাব। এর মধ্যে দুই দফায় গ্রেফতারর ১২ জন এই তালিকার বাইরে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘কোন জেলা থেকে কতজন নিরুদ্দেশ হয়েছেন, সেই তালিকা আমাদের কাছে আছে। তাদের কারও কারও পরিবার জানে, সন্তান বিদেশে গেছেন, তারা মাঝেমধ্যে অর্থ পাঠান। কিন্তু আসলে তারা জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছেন।’ নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কমান্ডার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘সেখানে তাদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের নাশকতার কী পরিকল্পনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত অভিযান চলছে। আরও গ্রেপ্তার হলে তারপর তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে বলা যাবে।’
র্যাবের তালিকায় থাকা ৩৮ জন হলো- মো. দিদার, তাহিয়াত চৌধুরী, আহাদ, মশিউর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, আরিফুর রহমান, মো. নঈম হোসেন, শামীম মিয়া, আল আমিন ফকির, আমিনুল ইসলাম, মো. নাজমুল আলম নাহিদ, আল আমিন, শেখ আহমদ মামুন, মো. আস সামি রহমান, সাদিক, হাসান সাঈদ, বায়েজিদ, জুয়েল মুসল্লী, ইমরান রহমান শিথিল, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আল আমিন, ইমরান, শিব্বির আহমদ, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ আবু জাফর, যুবায়ের, নিহাদ আব্দুল্লাহ, মাহমুদ ডাকুয়া, আমির হোসেন, নাহিদ, সালেহ আহমাদ, রাব্বী আবদুস সালাম, ইয়াছিন ব্যাপারী, মো. মিরাজ সিকদার, ওবায়দুল্লাহ সাকিব, জহিরুল ইসলাম, আবু হুরায়রা ও আবুল বাশার মৃধা।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিদের অর্থের যোগান দিচ্ছে এমন বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। সেসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এগুলো কী ধরনের অর্থায়ন, অর্থের যোগানদাতা বা ডোনারদের নিজস্ব অর্থ না কিনা, তারা অন্য কোনও জায়গা থেকে বা যারা সহানুভূতিশীল তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে কিনা, সেটি কি দেশে না বিদেশ থেকে এসেছে, এসব বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি, যাচাই-বাছাই করছি।