শিরোনামঃ
কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমান সামগ্রী ব্যবহার, সরকারী অর্থ নয়ছয়! সিএনজি চালক থেকে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক মাসুম, সমালোচনার ঝড় পঙ্গু হাসপাতালে যেনো পুকুর চুরির মতো ঘটনা" ১১ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড : ঐক্য পরিষদ এর সভাপতিসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা! এনবিআরের গেট বন্ধ, ঢুকতে পারছেন না ঐক্য পরিষদের নেতারা মব জাস্টিস প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, পুলিশের গাফিলতি থাকলেও ব্যবস্থা ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা

রিজার্ভ, জ্বালানি, রোহিঙ্গা ইস্যু হতে পারে প্রধান চ্যালেঞ্জ

#
news image

অর্থনৈতিক সংকটের মুখে বিশ্বে দিন দিন বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। বিশ্ববাজারের এই অস্থিতিশীলতায় চাপে পড়েছে বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত। সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। উৎপাদন ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি দুইয়ের গ্রাফই এখন ঊর্ধ্বমুখী এবং চাপ পড়ছে রিজার্ভেও। 
এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে গত এক বছরে বাংলাদেশেরই রিজার্ভ কমেছে সবচেয়ে দ্রতগতিতে। জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও রিজার্ভের দ্রুত অবনমন এখন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এই আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে দেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে এ মুহূর্তে বহিরাগত উদ্বাস্তুদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আবার এ উদ্বাস্তুদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতাদের সহযোগিতাও এখন দিন দিন কমছে। একই সঙ্গে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপে পড়ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজার ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলোর আর্থসামাজিক পরিবেশে এখন এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ভয়াবহ অবনতি হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও। বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পুনরায় ক্ষমতা দখল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যাবতীয় পথ আপাতত রুদ্ধ করে দিয়েছে।
জ্বালানি সমস্যা, রিজার্ভ দ্রুত কমে আসা ও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সংকটকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, বিদ্যমান পরিস্থিতিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা না গেলে সামনের দিনগুলোয় তা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক বিপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে জ্বালানি-রিজার্ভ-রোহিঙ্গাসহ জাতীয় অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো এখনো খুব বড় ধরনের হুমকি হয়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন সরকারের সাবেক ও বর্তমান নীতিনির্ধারকরা। বিষয়গুলো নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণও নেই বলে অভিমত তাদের।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক প্রভাতী খবরকে বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে। পৃথিবীর সব দেশই কম-বেশি এরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, আমরাও করছি। বৈশ্বিক এ মন্দা সামলাতে বর্তমানে বাংলাদেশ সংকোচন নীতিতে রয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও সম্প্রতি সময়ে একাধিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২৩ সাল সম্ভাব্য মহা সংকটের বছর হবে বলে মূলত খাদ্য সংকটের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং এ মন্দা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে তার সরকার ইতোমধ্যেই আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেছেন যে বাংলাদেশের এ মূহুর্তে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো যা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এদিকে ওয়াশিংটন থেকে গত মাসেই বিশ্বব্যাংক তার ‘বিশ্বে কি মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির তিন মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের অর্থনীতি দ্রুত গতি হারাচ্ছে। ফলে আগামী বছরে সামান্য আঘাতেও মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৩ সালের দিকে মন্দার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
মূলত দু বছরের করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরেই বিশ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যা মোকাবেলায় দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক অর্থনীতির এ হালের জন্য এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ আর পরাশক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞাকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের মানুষকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে শস্য আবাদের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যাতে করে উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষ বাড়তি সঞ্চয় করতে পারে। 
সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করেছে ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সেটি প্রভাব ফেলবে। আমদানি করা পণ্যগুলোর দাম বাড়বে ও দেশীয় তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে এবং বাজারে আবারো ডলার সংকট তৈরি হতে পারে।’
বিদিশার মতে জ্বালানি তেলের দাম মন্দায় কমে আসলে বাংলাদেশের বাজারে তার সমন্বয়টা বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে পারলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। 
তবে কৃষিখাতে আরও রেমিটেন্সে প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ ঠিক মতো নিতে পারলে মন্দার চাপ মোকাবেলা করা কিছুটা সহজ হবে। একই সাথে চলতি বছর ডলার সংকট মোকাবেলায় যেভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সে ধরণের পদক্ষেপ নেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সামগ্রিক বিচারে এ কথা বলা যায় যে, চলতি বছরের প্রথম দিকের তুলনায় শেষের দিকে এসে অর্থনীতির গতি দুর্বল হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হোঁচট খেয়েছে অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, শুধু উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্য বোঝা যাবে না। 
সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি বছর আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় ১১ শতাংশ কমে গেছে। আগের মাস জুলাইয়ে কমেছিল ২১ শতাংশ। গত ১০ বছরে রপ্তানি এভাবে কমতে দেখা যায়নি। 
এনিয়ে উদ্যোক্তারা বলছেন, অনেক দেশ ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়ে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। আবার কারখানায় সংস্কারের উন্নতি হলেও ক্রেতারা অন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দর বাড়াচ্ছেন না। এর সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধিও তাদের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। 
এদিকে বেসরকারি খাতের বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁচেছে। অক্টোবরে এই হার মাত্র ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির চেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক নিচে।  বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজারের অবস্থা আরও দুর্বল হয়েছে। উদ্যোক্তাদের পুঁজি ও ঋণ জোগান দেওয়ার এই দুই খাতেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষত রয়েছে। বিশেষ সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নেয়া হলেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তারল্য সংকট প্রবল হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ের আমানত ফেরত দিতে না পারায় বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছিল ৫০১ কোটি টাকার, যা ২০২০ সালে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায়। দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু মহামারির মধ্যে দুই মাসের লকডাউন আর বিশ্ব বাজারের স্থবিরতায় তা বড় ধাক্কা খায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশে নেমে আসে।
রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মহামারির মধ্যেই রিজার্ভ ৪৪.১২ বিলিয়ন (৪ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল যা গত অর্থবছরের (২০২১-২২) আগস্টের শেষে দাড়িয়েছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উপরে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসেই দেশে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। যেখানে আগস্টের শেষেও এর পরিমাণ ছিল ৩৯ বিলিইয়ন ডলারের কাছাকাছি। এর আগে জুলাইয়ের শেষে তা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। 
এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে বাংলাদেশেই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে বলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংসের এক সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আবার এর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও বড় হচ্ছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, গত এক বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করেছে। শুধু গত অর্থবছরেই (২০২১-২২) রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৭৪০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরেও এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ২৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তত ১১ বিলিয়ন ডলার কমেছে। এ অবস্থায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির নীতি থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিনিময় হার বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পণ্য ও জ্বালানি বাজারে দর বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি এখন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। 
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার কারণে স্থিতিশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জনগণকে চলমান বৈশ্বিক সংকটের সময়েও চড়া মূল্য দিতে হয়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো গত কয়েক বছর বেশ ঔদাসীন্যের পরিচয় দিয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে ডলারের বিনিময় হার সমন্বয় করার দরকার ছিল। কিন্ত সেটি না করে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা হয়েছে। এ কারণে গত ছয় মাসেই টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের শেষে তা ১৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়াতে পারে। বাণিজ্য ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে বাড়ছে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানি-রিজার্ভ-রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। এর মধ্যে এক্সটারনাল বা বহিরাগত সমস্যাগুলোর ওপরে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ তিন সমস্যার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আরো কিছু সমস্যা আছে, যেগুলোও কম না। যেমন আর্থিক খাতের সমস্যা। নানা রকম অনিয়ম, আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে এ খাতে। আর্থিক খাতটি অর্থনীতির প্রতিটি কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে। 
সাবেক মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপের ক্লাইমেট সংকটসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দা দেখা দিয়েছে। স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেক সংকোচ নীতির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মন্দা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যাতে সবাই তা মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন।’

এসএম শামসুজ্জোহা

১৩ অক্টোবর, ২০২২,  10:29 PM

news image

অর্থনৈতিক সংকটের মুখে বিশ্বে দিন দিন বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। বিশ্ববাজারের এই অস্থিতিশীলতায় চাপে পড়েছে বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত। সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। উৎপাদন ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি দুইয়ের গ্রাফই এখন ঊর্ধ্বমুখী এবং চাপ পড়ছে রিজার্ভেও। 
এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে গত এক বছরে বাংলাদেশেরই রিজার্ভ কমেছে সবচেয়ে দ্রতগতিতে। জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও রিজার্ভের দ্রুত অবনমন এখন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এই আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে দেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে এ মুহূর্তে বহিরাগত উদ্বাস্তুদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আবার এ উদ্বাস্তুদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতাদের সহযোগিতাও এখন দিন দিন কমছে। একই সঙ্গে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপে পড়ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজার ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলোর আর্থসামাজিক পরিবেশে এখন এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ভয়াবহ অবনতি হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও। বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পুনরায় ক্ষমতা দখল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যাবতীয় পথ আপাতত রুদ্ধ করে দিয়েছে।
জ্বালানি সমস্যা, রিজার্ভ দ্রুত কমে আসা ও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সংকটকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, বিদ্যমান পরিস্থিতিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা না গেলে সামনের দিনগুলোয় তা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক বিপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে জ্বালানি-রিজার্ভ-রোহিঙ্গাসহ জাতীয় অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো এখনো খুব বড় ধরনের হুমকি হয়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন সরকারের সাবেক ও বর্তমান নীতিনির্ধারকরা। বিষয়গুলো নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণও নেই বলে অভিমত তাদের।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক প্রভাতী খবরকে বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে। পৃথিবীর সব দেশই কম-বেশি এরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, আমরাও করছি। বৈশ্বিক এ মন্দা সামলাতে বর্তমানে বাংলাদেশ সংকোচন নীতিতে রয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও সম্প্রতি সময়ে একাধিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২৩ সাল সম্ভাব্য মহা সংকটের বছর হবে বলে মূলত খাদ্য সংকটের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং এ মন্দা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে তার সরকার ইতোমধ্যেই আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেছেন যে বাংলাদেশের এ মূহুর্তে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো যা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এদিকে ওয়াশিংটন থেকে গত মাসেই বিশ্বব্যাংক তার ‘বিশ্বে কি মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির তিন মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের অর্থনীতি দ্রুত গতি হারাচ্ছে। ফলে আগামী বছরে সামান্য আঘাতেও মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৩ সালের দিকে মন্দার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
মূলত দু বছরের করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরেই বিশ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যা মোকাবেলায় দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক অর্থনীতির এ হালের জন্য এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ আর পরাশক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞাকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের মানুষকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে শস্য আবাদের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যাতে করে উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষ বাড়তি সঞ্চয় করতে পারে। 
সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করেছে ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সেটি প্রভাব ফেলবে। আমদানি করা পণ্যগুলোর দাম বাড়বে ও দেশীয় তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে এবং বাজারে আবারো ডলার সংকট তৈরি হতে পারে।’
বিদিশার মতে জ্বালানি তেলের দাম মন্দায় কমে আসলে বাংলাদেশের বাজারে তার সমন্বয়টা বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে পারলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। 
তবে কৃষিখাতে আরও রেমিটেন্সে প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ ঠিক মতো নিতে পারলে মন্দার চাপ মোকাবেলা করা কিছুটা সহজ হবে। একই সাথে চলতি বছর ডলার সংকট মোকাবেলায় যেভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সে ধরণের পদক্ষেপ নেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সামগ্রিক বিচারে এ কথা বলা যায় যে, চলতি বছরের প্রথম দিকের তুলনায় শেষের দিকে এসে অর্থনীতির গতি দুর্বল হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হোঁচট খেয়েছে অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, শুধু উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্য বোঝা যাবে না। 
সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি বছর আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় ১১ শতাংশ কমে গেছে। আগের মাস জুলাইয়ে কমেছিল ২১ শতাংশ। গত ১০ বছরে রপ্তানি এভাবে কমতে দেখা যায়নি। 
এনিয়ে উদ্যোক্তারা বলছেন, অনেক দেশ ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়ে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। আবার কারখানায় সংস্কারের উন্নতি হলেও ক্রেতারা অন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দর বাড়াচ্ছেন না। এর সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধিও তাদের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। 
এদিকে বেসরকারি খাতের বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁচেছে। অক্টোবরে এই হার মাত্র ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির চেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক নিচে।  বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজারের অবস্থা আরও দুর্বল হয়েছে। উদ্যোক্তাদের পুঁজি ও ঋণ জোগান দেওয়ার এই দুই খাতেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষত রয়েছে। বিশেষ সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নেয়া হলেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তারল্য সংকট প্রবল হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ের আমানত ফেরত দিতে না পারায় বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছিল ৫০১ কোটি টাকার, যা ২০২০ সালে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায়। দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু মহামারির মধ্যে দুই মাসের লকডাউন আর বিশ্ব বাজারের স্থবিরতায় তা বড় ধাক্কা খায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশে নেমে আসে।
রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মহামারির মধ্যেই রিজার্ভ ৪৪.১২ বিলিয়ন (৪ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল যা গত অর্থবছরের (২০২১-২২) আগস্টের শেষে দাড়িয়েছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উপরে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসেই দেশে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। যেখানে আগস্টের শেষেও এর পরিমাণ ছিল ৩৯ বিলিইয়ন ডলারের কাছাকাছি। এর আগে জুলাইয়ের শেষে তা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। 
এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে বাংলাদেশেই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে বলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংসের এক সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আবার এর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও বড় হচ্ছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, গত এক বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করেছে। শুধু গত অর্থবছরেই (২০২১-২২) রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৭৪০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরেও এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ২৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তত ১১ বিলিয়ন ডলার কমেছে। এ অবস্থায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির নীতি থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিনিময় হার বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পণ্য ও জ্বালানি বাজারে দর বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি এখন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। 
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার কারণে স্থিতিশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জনগণকে চলমান বৈশ্বিক সংকটের সময়েও চড়া মূল্য দিতে হয়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো গত কয়েক বছর বেশ ঔদাসীন্যের পরিচয় দিয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে ডলারের বিনিময় হার সমন্বয় করার দরকার ছিল। কিন্ত সেটি না করে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা হয়েছে। এ কারণে গত ছয় মাসেই টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের শেষে তা ১৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়াতে পারে। বাণিজ্য ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে বাড়ছে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানি-রিজার্ভ-রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। এর মধ্যে এক্সটারনাল বা বহিরাগত সমস্যাগুলোর ওপরে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ তিন সমস্যার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আরো কিছু সমস্যা আছে, যেগুলোও কম না। যেমন আর্থিক খাতের সমস্যা। নানা রকম অনিয়ম, আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে এ খাতে। আর্থিক খাতটি অর্থনীতির প্রতিটি কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে। 
সাবেক মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপের ক্লাইমেট সংকটসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দা দেখা দিয়েছে। স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেক সংকোচ নীতির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মন্দা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যাতে সবাই তা মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন।’